প্রকাশিত: Tue, Dec 13, 2022 6:08 PM
আপডেট: Sat, May 10, 2025 9:24 AM

অরুণাচল সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সৈন্যদের সংঘর্ষ, বেশ কয়েকজন আহত

রাশিদুল ইসলাম: ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরের ইয়াংটসে গত শুক্রবার গভীর রাতে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যরা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার পর উভয় পক্ষের সেনারা আহত হয়েছে। সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষা সংস্থার সূত্র জানিয়েছে স্থানীয় কমান্ডারদের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর দুই দেশের সৈন্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গত ৯ ডিসেম্বর, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সৈন্যরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) ভারতের দিকে অতিক্রম করার চেষ্টা করলে ভারতীয় সৈন্যরা তাদের বাধা দেয়। দি প্রিন্ট

তাওয়াং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কিছু অঞ্চলে উভয় পক্ষই টহল দেয়। ভারতের দাবি, চীনের সেনারা ভারতীয় সীমান্তে ঢুকে পড়লে তাদের সেনারা বাধা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পূর্ব লাদাখে রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষের আড়াই বছরের বেশি সময় পর দুই দেশের সেনারা আবারও সংঘর্ষে জড়ালেন। পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের জুনে। এতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হন। এ ছাড়া চীনের ৪০ সেনা হতাহতের দাবি করে ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের সেনাদের একাধিক লড়াই হয়।

২০০৬ সাল থেকে ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত শুক্রবার অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরের উত্তেজনাপূর্ণ ইয়াংটসে এলাকায় অন্তত ২শ চীনা সৈন্য লাঠি, টেজার বন্দুক নিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। অন্তত ৫০ জন ভারতীয় সৈন্য চীনা সৈন্যদের মুখোমুখি হয়ে ওই সীমান্তে অবস্থানের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানায়। গত বছর অক্টোবরে ওই সীমান্তে দুটি দেশের সৈন্যরা এক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এবার সংঘর্ষের খবর পাওয়ার আধঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় ব্যাকআপ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। উভয় পক্ষের সৈন্যরা প্রথমে একে অপরের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। এধরনের সংঘর্ষ চলে অন্তত আধ ঘন্টা। এরপর উভয় পক্ষে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। 

এদিকে অরুণাচলের পরিস্থিতি নিয়ে সেনা কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সংসদে এ বিষয় নিয়ে একটি বিবৃতিতে রাজনাথ বলেন কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি চীনের কাছে তুলবে ভারত। ভারতের বিরোধীদলগুলো আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছে যে সীমান্তে ভারতের ভূখÐ বহুদিন হল দখল করে রেখেছে চীন। সংসদ শুরুর আগে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা চীন নিয়ে আলোচনা দাবি করে। অরুণাচলের ঘটনায় পরিস্থিতি সরকারের পক্ষে নতুন অস্বস্তির কারণ হয়েছে। 

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে রাজনাথ চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ এবং তিন সেনা প্রধানকে বৈঠকে ডেকেছেন। কারণ, সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি সরকারের করণীয় চূড়ান্ত করতে হবে। শুক্রবারের সংঘর্ষের পর অন্তত ছয়জন আহত ভারতীয় সেনাকে চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটিতে স্থানান্তরিত করা হয়। ভারতের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয় ৯ ডিসেম্বর চীনা সৈন্যরা তাওয়াং সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ভারতের থেকে চীনের সেনা বেশি আহত হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঝামেলা বহু দিনের। তবে দুই দেশই নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত টহল দেয়। যে রীতি ২০০৬ সাল থেকেই চলে আসছে। এরপর এবারই প্রথম এ ধরণের কোনো সংঘাত হলো।

কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সীমান্ত ইস্যুকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। মূলত সে কারণেই চীন ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে। সোমবার অরুণাচল প্রদেশে ভারত ও চীনের সেনা সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর প্রকাশ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারকে এই তোপ দাগল কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে আমরা রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু চীনা সীমালঙ্ঘন নিয়ে সকল তথ্য প্রকাশ করা উচিৎ সরকারের। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্ররেখার কাছে চীন যেসব নির্মাণ কাজ করেছে, সেই বিষয়ে সৎ হওয়া উচিত বিজেপি সরকারের। এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা করে সরকারের উচিৎ জাতির আস্থা অর্জন করা। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক টুইট বার্তায় লেখেন, সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বে আমরা গর্বিত। গত দুই বছর ধরে আমরা বারবার সরকারকে জাগানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকার শুধুমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বাঁচাতে বিষয়টি চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে চীনের সাহস বাড়ছে।

তবে বিতর্কের রাস্তায় না গিয়ে ভারতীয় সেনাদের প্রশংসা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আম আদমি পার্টির জাতীয় আহŸায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এক টুইটে তিনি বলেন, আমাদের জওয়ানরা দেশের গর্ব। আমি তাদের সাহসিকতাকে সালাম জানাই এবং আহত জওয়ানদের দ্রæত আরোগ্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ